Monday, November 3, 2014

বৈশাখের এই ভোরের হাওয়া

তার কথা কবে প্রথম ভাবতে শুরু করেছি, কবে প্রথম স্বপ্ন দেখেছি, কবে প্রথম ঝগড়া করেছি, কবে সেই অমোঘ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি মনে মনে, কবে সব দ্বিধা কাটিয়ে উঠে দিন গুনতে শুরু করেছি একটা একটা করে, কবে কবে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ভেবেছি, আর বোধহয় পারলাম না, সে সব এখন কেমন ঝাপসা ঝাপসা ঠেকে। শুধু মনে পড়ে কতগুলো ভরা বর্ষার ভোর। ভেজা ভেজা রাস্তায় গাড়ির ভিড় কম, চায়ের দোকানের প্লাস্টিকের শেডের তলায় প্রাত্যহিক আগন্তুকদের অলস চুমুক, আর তাদের কাটিয়ে কাটিয়ে লাল টুকটুকে গাড়ির এগিয়ে চলা। একটা ধূসর গেট, ভিতরে মেরি আর যিশুর মূর্তি, বাদামি আর ছাইরঙা পুরোনো বাড়িটা। নীচের চাতালে বেঞ্চি পাতা। তাতে বসে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকা উপরের বারান্দার দিকে। ছোট্ট মুখগুলো উঁকি দিয়েই লুকিয়ে পড়ে, কেউ রেলিং ধরে টলমল পায়ে, কেউ পুরনো ওয়াকারে, কেউ বা আয়ামাসিদের কোলে কোলে। আমাদের ওখানে ঢুকতে দেয় না। আমাদের গন্তব্য সিঁড়ির তলার ছোট্ট ঘরে। সেখানেই ঠান্ডা গলায়, কেজো সুরে বলতে হবে আমার সবচেয়ে আবেগপূর্ণ অনুভূতির কথাটা।




বলতে পেরেছিলাম আমি, আমরা। ধৈর্য ধরেছিলাম, কেঁদেছিলাম, হেসেছিলাম, অপেক্ষা করেছিলাম, ভাবনা করেছিলাম। সব পরীক্ষার শেষে এক রাতে সেই ফোন এল। দক্ষিণী ইংরেজিতে কেঠো গলার স্বর বলল, ‘পল্লবী বলছেন? আমি সিস্টার মারিয়া। বুঝতে পারছেন তো কেন ফোন করেছি?’ তারিখ ছিল ৭ অগস্ট। পরের দিন, ৮ অগস্ট সকাল সোয়া নটায় আমরা ওকে প্রথম দেখলাম। সবুজ জামাপেন্টু পরা একদলা মাখনের মতো কী যেন একটা আমার দুহাতে ধরিয়ে দিলেন সিস্টার মারিয়া। আর তার দিকে তাকাতেই একটা হাওয়া বয়ে গেল কোথা দিয়ে। বসন্তবায়? বর্ষাবিধুর সমীরণ? তপ্ত মলয়? কী বলতেন কবিগুরু একে জানি না। শুধু জানি, অনেকদিনের পুরনো ঘষা কাচের মতো জীবনটা আর তেমনটি রইল না। যাবার বেলায় মলিন জীবনটা নূতনের কানে কানে বলল, ‘স্নান করে আয় এখন তবে / প্রেমের বসন পরতে হবে / সন্ধ্যাবনের কুসুম তুলে গাঁথতে হবে হার/ ওরে আয় সময় নেই যে আর/ এই মলিন বস্ত্র ছাড়তে হবে, হবে গো এইবার।’